ঢাকা, বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪

বাকৃবিতে ছাত্রীদের আবাসন-সংকট চরমে 

বাকৃবি সংবাদদাতা 

প্রকাশিত : ১৬:৪০, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) সাম্প্রতিক সময়ে তুলনামূলকভাবে ছাত্রীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ছাত্রী হলগুলোতে আবাসন সংকট দেখা দিয়েছে। আবাসন সমস্যা নিরসনের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করে আসছেন ছাত্রীরা। 

সংকট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে ছাত্রীদের জন্য নতুন হল নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীরা বেশি ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৬০৩ জন ছাত্রী এবং ৫০৫ জন ছাত্র। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর ৪৩ শতাংশ ছাত্রী। শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক ১৩ হলের মধ্যে ছাত্রীদের জন্য মাত্র ৪টি হল রয়েছে। 

সময়ের পরিক্রমায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর সংখ্যা বাড়লেও হলের সিট সংখ্যা বাড়েনি। এ বছর ভর্তি হওয়া নতুন ছাত্রীরা থাকছেন হলের ডাইনিং, গ্রন্থাগার এমনকি হলের নামাজ কক্ষে। স্থান সংকুলান না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষেধক শাখার বেশ কয়েকটি কক্ষেও রাখা হয়েছে তাদের।

শিক্ষাবিষয়ক শাখার গত ডিসেম্বরের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ৯২৩ জন। এর মধ্যে কিছু শিক্ষার্থী এ বছর বের হয়েছেন। নতুন ভর্তি হয়েছেন ১১০৮ জন, তন্মধ্যে ৬০৩ জন ছাত্রী। আর ১৩টি হলের ছাত্র-ছাত্রী মিলিয়ে মোট আসন আছে মাত্র ৫ হাজার ৮৭৬টি। এমনিতেই শিক্ষার্থীদের সংখ্যার চেয়ে প্রায় ৩ হাজার আসন কম রয়েছে। আর প্রায় ৪ হাজার ছাত্রীর জন্য তাদের ৪টি হলের আসনসংখ্যা মাত্র ২ হাজার ৪০০ এর মতো।

সুলতানা রাজিয়া হলের দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘হলের গণরুমে গাদাগাদি করে বসবাস করতে হচ্ছে। এতে কোনো রকমে রাত কাটানো সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় পড়াশুনা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেগম রোকেয়া হলের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, ‘আবাসন-সংকটের কারণে একক আসন পেতে প্রায় ২-৩ বছর চলে যায়। গণরুমে থাকলে স্বাস্থ্যগত নানা সমস্যা তৈরি হয়। প্রয়োজন মতো শৌচাগারও না থাকায় বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলেও বাস্তবায়নে নেই তেমন কোনো অগ্রগতি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে অবস্থান করা এক ছাত্রী বলেন, ‘স্বাস্থ্যকেন্দ্রে থাকায় আমাদের জন্য ডাইনিংয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। প্রতি বেলায়ই বাহিরের হোটেল থেকে খাবার আনতে হয়। পাশাপাশি খাবার পানি, ওয়াশরুম ও সীমিত জায়গায় গাদাগাদি করে থাকার ফলে পরিবেশ নষ্টসহ বিভিন্ন সমস্যা পোহাতে হচ্ছে আমাদের। এছাড়া রোগীদের আসা-যাওয়া এবং চিকিৎসাকেন্দ্রের নির্দিষ্ট সীমারেখা না থাকায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।’

ছাত্রীদের আবাসন-সংকটের পাশাপাশি ছাত্রদেরও রয়েছে একই সমস্যা। ৫ হাজারের বেশি ছাত্রের জন্য ৯টি হলে আসন রয়েছে মাত্র ৩ হাজার ৪৭৫টি। বছর বছর ভর্তিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়লেও হলের সংখ্যা বাড়ায়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ১৯৯৮ সালের পর ছাত্রদের জন্যে কোনও নতুন হল নির্মাণ করা হয়নি।

ছাত্রীদের আবাসন সংকট নিরসনের বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান বলেন, ছাত্রীদের আবাসন সংকটের তাৎক্ষণিক সমাধানের জন্য সুলতানা রাজিয়া হলের একপাশের ব্লক সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চতুর্থ তলার নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। চলতি বছরের মে-জুন মাসের মধ্যেই মেয়েদের জন্য নতুন দুইটি হলের নির্মাণ কাজ শুরু হবে। এতে ছাত্রীদের শতভাগ আবাসন নিশ্চিত হবে বলে জানান তিনি।

আরকে/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি